রায়েরকাঠী জমিদার বাড়িঃ প্রায় সাড়ে তিনশত বছর আগে এখানে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলো এক ঐতিহাসিক জমিদার বংশ। জেলা শহর থেকে একটু উত্তরে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে তার অবস্থান। এই জমিদার বাড়িতে নির্মিত হয় রাজভবন, নহবৎখানা, অতিথিশালা, নাট্যশালা এবং অসংখ্য মন্দির। রাজবাড়ীতে ছিলো ছোট বড় প্রায় দু’শ অট্টালিকা। তন্মধ্যে ৪০ বা ৫০টি গণচুম্বী অট্টালিকা রাজবাড়ির শোভর্ধন করতো। জমিদার বাড়িতে ১৬৫৮ সালে কালিমন্দির নির্মাণ করা হয়। এখানে রয়েছে প্রায় ২৫ মন ওজনের শিব লিঙ্গ। এটি উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শিবলিঙ্গ। |
মঠবাড়িয়ার সাপলেজা কুঠিরবাড়িঃ প্রায় দুইশত বছর আগে ইংরেজ সাহেব এডওয়ার্ড পেরি ক্যাসপার মঠবাড়িয়ায় এলে অত্র এলাকার ধনাঢ্য ফরাজউল্লাহ তাকে ১৪ বিঘা জমি দান করেন। সেই ১৪ বিঘা জমিতে কুঠিবাড়ি নির্মিত হয়। প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষদিকে কুঠিরবাড়িতে পূণ্যাহ উৎসব হতো। তখন প্রজারা মেতে উঠতো উৎসবে। ১৯৪৭ এর ভারত বিভক্তির সময়ই ব্রিটিশরা কুঠিবাড়ি থেকে চলে যায়। ক্যাসপার সাহেব চলে যাওয়ার আগে সাপলেজা এলাকার গ্রামের নাম তার পিতা শিলার সাহেবের নামে নামকরণ করে যান। |
পিরোজপুরের প্রাচীন মসজিদঃ পিরোজপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি আজ থেকে প্রায় ২শত ২০ বছর পূর্বে স্থাপিত হয়। ১৮৮২ সালে ভারতবর্ষের উত্তর প্রদেশের হাফেজ মোহাম্মদ সোলায়মান এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করে গোলপাতার ছাউনী দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। গোলপাতার তৈরি মসজিদটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আপ্রাণ চেষ্টায় ও আর্থিক সাহায্যে ১৮৯৪ সালের দিকে পর্যায়ক্রমে দালানে উন্নীত হয়। ইয়াসিন সর্দার নামক এক ব্যক্তির কবর এখনও মসজিদের ভিতরে অবস্থিত। তিনি এই মসজিদের অন্যতম একজন খাদেম ছিলেন। |
মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদঃ মঠবাড়িয়া উপজেলার সর্ব উত্তর দিকে বুড়িরচর গ্রামে অবস্থিত আকন বাড়ি। দুশো বছরের পুরানো এই ঐতিহ্যবাহী বাড়ির সামনের উঠোনে প্রায় শতবর্ষীয় ঐতিহ্যবাহী মমিন মসজিদ। সম্পূর্ণ কাঠের কারুকাজ দিয়ে তৈরি এই মসজিদটি শিল্পকল্পে এক অপূর্ব নিদর্শন যা ইন্দো-পারসিক আর ইউরোপীয় ধারায় স্থপতির নিজস্ব মৌলিক উৎকর্ষের মিশ্রণে তৈরি এক নতুন স্থাপত্য। শিল্পকর্ম হিসেবে মসজিদটি বাংলাদেশে অদ্বিতীয়। তাই এটি সংরক্ষণের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৭ এপ্রিল ২০০৩ তারিখের প্রজ্ঞাপনমূলে ‘‘সংরক্ষিত প্রত্ন সম্পদ’’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে তাদের তালিকাভুক্ত করেছে। |
শ্রীরামকাঠী প্রণব মঠ সেবাশ্রমঃ পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার কালীগঙ্গা নদীর অববাহিকায় দেবদুয়ার মোহনার নিকটে শ্রীরামকাঠী বাজার সংলগ্ন ভীমকাঠী গ্রামে এ মঠের অবস্থান বরিশাল জেলার ধলহার গ্রামে শরৎ চন্দ্র মিত্রের পিতৃভূমি ছিল। তিনি শ্রীরামকাঠীতে ডিসপেনসারি খুলে ডাক্তারী পেশায় নিয়োজিত হলে শ্রীরামকাঠীর বাসিন্দা হয়ে যান। হিন্দু ধর্ম চর্চার ক্ষেত্রে শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজী নামে তিনি অভিহিত। তিন বিঘা জমির উপর শ্রীরামকাঠী প্রণবমঠ সেবাশ্রম স্থাপিত। |
গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাবঃ জেলার সবচেয়ে পুরনো এই মিলনায়তনটিএই জনপদের বহু ভাঙ্গাগড়ার সাক্ষী। সংস্কৃতি বিনোদনে জন্ম অবধি নিবেদিত এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। |
শেরে বাংলা পাবলিক লাইব্রেরী: পিরোজপুরের অন্যতম একটি জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের নাম শেরেবাংলা পাবলিক লাইব্রেরী। ১৯৫৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি থাকেন পদাকিার বলে মহকুমা প্রশাসক। |
মাঝের চর মঠবাড়ীয়া : উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিঃমিঃ দক্ষিণ পশ্চিমে বলেশ্বর নদীর মধ্যবর্তী স্থানে ৫০ বছর পূর্বে জেগে ওঠা ১২ একর আয়তনের একটি চর। বিগত ১৫ নভেম্বর, ২০০৭ সালে সংগঠিত সিডর পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ডিউক অব গ্লুচেষ্টার সেখানে একটি পযর্টন স্পট গড়ে তোলে। |
পারেড় হাট জমিদার বাড়ী : জিয়ানগর উপজেলায় পিরোজপুর শহর থেকে ১৮ কিঃমিঃ দূরে জমিদার সূর্য বাহাদুর বাজপেয়ী-এর পুরাতন জমিদার বাড়ী। জনশ্রুতি আছে যে, সূর্য বাহাদুর বাজপেয়ী ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী-এর পূর্ব পুরুষ। |
বলেশ্বর ঘাট শহীদ স্মৃতিস্তভ: পিরোজপুর শহরের পশ্চিম পাশ্বে বলেশ্বর নদীর তীরে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পিরোজপুরের আদূরে চালিতাখালী গ্রাম থেকে এক দড়িতে ধরে আনা হয় মোসলেম আলী শেখ, আব্দুর রহমান সরদার, খাউলবুনিয়ার আব্দুল গফ্ফার মাস্টার, জলিল হাওলাদার, জুজখোলার শতীস মাঝি এবং শামছু ফরাজীসহ ১২ জন হতভাগ্যকে বলেশ্বরের বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। |